Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

বিশেষ অর্জন

যশোদল ইউনিয়নের ইতিহাস

যশোদল ইউনিয়নের ইতিহাস : কিশোরগঞ্জ জেলার কিশোরগঞ্জ সদর এর খুবই নিকটবতী ইউনিয়ন ৫নং যশোদল ইউনিয়ন ।এই ইউনিয়নে বিপুল লোকের বসবাস ।যশোদল ইউনিয়নের শিক্ষার হার ৮০% । ইউনিয়নের অধিকাংশ লোকেই কৃষির উপর জীবিকা  নিবাহ করে থাকে ।এই ইউনিয়নে যাথায়ত ব্যবস্থার পাকারাস্তা খুবই সুন্দর।

            বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তার বাড়ী যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামে ।তারই ছেলে বতমান সরকারের মাননীয় এলজিইডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ ।

               যশোদল ইউনিয়নের যশোদল বাজারে একটি ছোট রেল শ্টেসন আছে ।

               অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম যশোদল ইউনিয়নের ৩নং ওয়াড মধ্যপাড়া গ্রামে সৈয়দ নজরুল ইসলাম নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্টা করে গেছেন ,পরে তা সরকারী অনুমুদিত হয়

যশোদল ইউনিয়নের বিশেষ অর্জন

মানুষের সমাজবদ্ধতার সাথে ভাষার উদ্ভব জড়িত, কারণ পরস্পরের কাছে মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্যই ভাষার আবশ্যিকতা। সংস্কৃতির সাথে রয়েছে ভাষার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। আঞ্চলিক ভাষা বিকশিত হয় কোন নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। সালুয়া সাংস্কৃতিক অঞ্চলে স্বতন্ত্র হয়েছে পূর্ব দিকে ছয়সূত্রী ইউনিয়ন। যে অঞ্চলের সীমানায় দক্ষিণ দিকে ফরিদপুর ইউনিয়ন, উত্তর দিকে রামদী ইউনিয়ন, পশ্চিম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদ। কিছু কিছু অমিল থাকার পরও এই সাংস্কৃতিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা, প্রবাদ প্রবচন ও লোকগাঁথায় বেশকিছু মিল পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ মেলামেশায় জাতি যেমন সংকর হয়ে ওঠে মানুষে মানুষে মেলামেশায় ভাষাও তেমনি সংকর হয়ে ওঠে এবং এভাবেই উপভাষার চরিত্র কখনও বিপন্ন হয়ে যায়। সালুয়া সাংস্কৃতিক অঞ্চলটি সে অর্থে অনেকটাই নিরাপদ এবং এই নিরাপত্তাই এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য।
ইউনিয়নেরআঞ্চলিক/স্থানীয়ভাষা লগে লগে বাঘা বাগদি আয়া কইল “ফটিকদা, মা ডাকতাছে”। ফটিক কইল “যাইতাম না”। বাঘা তারে জোড় কইরা কোল তুইল্যা লয়্যা গেল, ফটিক কিছু না পাইরা রাগের চোটে আত-পাও লাড়াইতাছিল। ফটিকরে দেইকখাই তার মা আগুনের মূর্তির লাহান হইয়া গেল, কইল “আবার তুই মাখনরে মারছস” ফটিক কইল “না মারছিনা”। “হিরেবারমিছা কথা কস”। “কুনো সমুই মারছিনা। মাখনরে জিগাও”।
প্রচলিতবুলি, বচন, কৌতুক, জোকস, প্রবাদবাক্য
ধারায় নারা বাইরায়, চৌদ্দ পুরুষ তার পেন্দে দৌড়ায়
[পূর্বপুরুষদের কাজ/অভ্যাস এর প্রভাব পরবর্তীদের মধ্যে ও র্দীঘদিন বহাল থাকে।]
এক পয়সার ঋণের লাইগ্যা চান্দেরে খাইল
[চন্দ্র্রগ্রহনের বেলায় প্রযোজ্য, বলা হতো যে, সূর্য এক পয়সা ঋনের জন্য চন্দ্রকে গ্রাস করছে।]
শিলে পাডায় ঘষাঘষি, মইচের জীবন শেষ
নাইড়্যা মাথায় টিনটিন, এক পয়সার তেলের টিন
[ছোট ছেলের মেয়ের মাথা ন্যাড়া করলে, তার বন্ধুরা তাকে খ্যাপানো জন্য বলে থাকে]
আইলসার ডাহুর [অত্যন্ত অলস], বলদ [বোকা অর্থে], লুহুনদরা [অলস], বাপের বেডা [সাহসী], চোপা করা [মুখে মুখে তর্ক করা] ইত্যাদি।
লোকসংস্কৃতি, লোকউৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথাঃ
লোক সংস্কৃতি,লোক উৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথার দিক দিয়ে সালুয়া ইউনিয়ন হলো প্রসিদ্ধ। রয়েছে কাজলরেখা, সফর মুল্লুক, রুপবান,  ইত্যাদি পালা।
তাছাড়া যাত্রাগান, গ্রামীণ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রা সালুয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্য।  সালুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসঙ্গীতগুলোর অন্যতম হলো বাউলগান, ভাটিয়ালী, কিস্সাপালা, কবিগান, কীর্তন, ঘাটুগান, জারিগান, সারিগান, মুর্শিদী, যাত্রা, বিয়ের গান, মেয়েলীগান, বিচ্ছেদী গান, বারমাসী, পুঁথিগান, পালকির গান, ধানকাটার গান, ধানভানার গান, হাইট্টারা গান, গাইনের গীত, বৃষ্টির গান, ধোয়া গান, শিবগৌরীর নৃত্য গীত, গাজীর গান, পটগান  ইত্যাদি ।
প্রধানপ্রধানউৎসবঃ
নবান্ন: সালুয়া ইউনিয়নে সুদূর অতীত হতে নতুন ধান উঠা উপলক্ষ্যে নবান্ন উৎসব প্রতি ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে। অগ্রহায়ন মাসে নতুন ফসল ঘরে উঠানোর পর ঐতিহ্যবাহী খাদ্য পরিবেশনের নামই হলো নবান্ন। নবান্নে পিঠা পার্বণের সাথে সাথে পুরনো কিচ্ছা, কাহিনী, গীত, জারি এই সবকে উপজীব্য করে চলে রাত্রীকালীন গানের আসর।
পিঠাউৎসব: অগ্রহায়ন পৌষের শীতে নবান্নের পিঠা-মিষ্টি উৎসবের সময় সালুয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। নানা ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছে তেলের পিঠা, মেরা পিঠা, পাটি সাপটা, মসলা পিঠা, পুলি পিঠা, গুলগুল্যা পিঠা, দই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ কলা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, নকসী পিঠা ইত্যাদি।
নববর্ষওমেলা:
সালুয়া ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে এখনও শহরের মতো বর্ষবরণের প্রচলন শুরু না হলেও অতিপ্রাচীনকাল হতে এখানে বিরল অথচ লোকজ ঐতিহ্যের দাবী নিয়ে দীপশিখা জ্বালিয়ে বাংলা বর্ষ বিদায়ের এক নীরব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো। মেলা উপলক্ষে মহিলারা বাপের বাড়ীতে নাইয়র আসত এবং মেলায় এসে ছোট বাচ্চারা খেলনা, বাঁশি, কিনতো। মেলায় বিভিন্ন রকম সার্কাস, দোলনা খেলা চলতো।
যাত্রাগান:
সাধারনত শীতকালে প্রাচীন লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে যাত্রার আয়োজন করা হয়। এই সব যাত্রা এবং যাত্রাগান কখনো কখনো রাতব্যাপী হয়ে থাকে। যেসব কাহিনী/বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যাত্রা হয় তমধ্যে কাজল রেখা, সফর মুল্লক, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং স্থানীয় ভাবে রচিত বিভিন্ন কাহিনী/উপাখ্যান অন্যতম।
পালাগান:বর্তমানে পালাগানের আয়োজন হয় না বললেই চলে। তবে পূর্বে বিভিন্ন স্থানে পালাগানের আয়োজন করা হতো।
নৌকাবাইচ:
বর্ষাকালে নদী বা বড় বড় খালগুলি যখন পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন বিভিন্ন স্থানে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতার আকারে আয়োজিত এসব নৌকা বাইচ অনুষ্ঠান স্থানীয় প্রশাসন এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।
বিয়ে/জম্মদিন/বিবাহবার্ষিকীরআনুষ্ঠানিকতাসংক্রান্তঃ
বাংলাদেশের অন্যান্য ইউনিয়নের মতোই সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সালুয়া ইউনিয়নে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে জম্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী পালনের প্রচলন আগে তেমন না থাকলেও ইদানিং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মাঝে তা ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী যায় কনের বাড়ীতে। কনের বাড়ীতে বরযাত্রীদের গায়ে রং ছিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহুদিনের, এই নিয়ে ঝামেলাও কম হয় না। বরপক্ষের আনা জিনিস পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি, সমালোচনা, রসাত্মক আলোচনা চলে কনে পক্ষের লোকজনের মধ্যে। খাওয়া-দাওয়া ও বিয়ে শেষে কনেকে বরের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়, সেখানে মহিলারা অপেক্ষা করেন ধান, দূর্বা, চিনি ইত্যাদি নিয়ে কনেকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য। পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দুই-তিন দিন পর বর ও কনে মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যায়, যাকে ‘ফিরানী’ বলা হয়। কয়েক দিন সেখানে থেকে পুণরায় বর নিজের বাড়ীতে ফিরে আসেন।
প্রচলিতখেলাধুলা, খেলাধুলারবিবর্তন
পূর্বে এ অঞ্চলে প্রধান আমোদ প্রমোদ ছিল ঘুড়ি উড়ানো, নাচগান, লীলা ও তাস খেলা, নৌকাবিহার, পাশা খেলা, বানর লম্ফ, মোরগ লড়াই, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, ক্যারম, গোল্লাছুট, দাবা, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, বৌচি ইত্যাদি। গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, মোরগ লড়াই ইত্যাদি খেলার স্থান ক্রমে দখল করে নিয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা। প্রযুক্তির উন্নতির দরুন টেলিভিশনের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ফুটবল ক্রিকেট খেলা গ্রাম ও শহরে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আজ বেশিরভাগ মাঠই দাড়িয়াবান্দা, হা-ডু-ডু, বৌচি, গোল্লাছুট ইত্যাদির পরিবর্তে ক্রিকেট বা ফুটবল দখল করে নিয়েছে। তবে গ্রামে এখন ও বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে গোল্লাছুট, বৌচি ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে।
খাদ্যভ্যাস, মিষ্টি-মিঠাই-পিঠা, স্থানীয়বিশেষখাবারঃ ইউনিয়নের গ্রামীণ উৎসব ও মেলায় নানা ধরনের ও বৈচিত্রে ভরপুর সৌখিন খাদ্যবস্তু পরিবেশন করতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি, নিমকি, খাস্তা, মুড়ির মোয়া, চিঁড়ার মোয়া, খৈ এর মোয়া, তিলের খাজা, কদমা, গজা, কটকটি, হাওয়াই মিঠাই ইত্যাদি। সকাল-এ ভাত/খিচুরী/রুটি, দুপুরে ও রাতে ভাত খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। তবে ‘জাউ’ এঅঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খাবার বিশেষ করে অস্বচ্ছল বা গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে। মিষ্টির মধ্যে রয়েছে, ডুমরাকান্দা গোপীনাথ মোদকে মালাইকারী, কালোজাম, রসমালাই,  এবং গুড়ের সন্দেশ ইত্যাদি।
জাতিগত/আঞ্চলিক/ভৌগোলিকবিশেষঅনুষ্ঠানমালাঃ এ ইউনিয়নে বসবাসরত  বিভিন্ন লোকজন তাদেরনিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতন এ ইউনিয়নের লোকজন বৈশাখী মেলা, ঈদ উৎসব, দূর্গাপূজাসহ অন্যান্য উৎসব জাকজমকের সাথে উদযাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, নির্মল ভ্রাতৃত্ববোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যকে জানার স্পৃহা ও আগ্রহভরা অংশগ্রহণ।
সামাজিকরীতিনীতি/সংস্কার/কুসংস্কার/প্রচলিতধ্যানধারণাঃ
অতিথিপরায়ণতা এ ইউনিয়নের একটি উল্লেখযোগ্য রীতি। ধনী গরীব নির্বিশেষে আপ্যায়ন বা মেহমানদারীর রীতিটি সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসবসমূহে আত্মীয়দের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া, নতুন কাপড় পরিধান করা, ভাল খাবার তৈরী করা ও অপরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো, ঘনিষ্ঠদের নতুন কাপড় উপহার দেয়া ইত্যাদি রীতি অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও প্রচলিত। মুসলিম মহিলাদের মধ্যে পর্দা পালনের রেওয়াজ বিদ্যমান, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অধিকহারে।  সব পরিবারই পুরুষ শাসিত। প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিশেষ করে গ্রামে পুরুষেরা আয় রোজগার ব্যস্ত থাকেন আর মহিলারা ঘরের কাজকর্ম সামলান।
বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, যৌতুক, নারীনির্যাতনসংক্রান্তঃ শহরাঞ্চলে এবং শিক্ষিতদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রচলন নেই বললেই চলে। তবে দরিদ্র এবং গ্রামীণ পরিবারে এখনও বাল্য বিবাহ ঘটতে দেখা যায়। সামাজিক ভাবে বহুবিবাহ প্রশংসনীয় নয়। যৌতুক সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি- একথা বলা যায় তবে তার পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। কালের আবর্তে যৌতুকের পণ্যে পরিবর্তন এসেছে। সাইকেল, টিভি, রেডিও এর পরিবর্তে এখন জমি, চাকুরীর জন্য ঘুষের টাকা, বরের বিদেশ যেতে প্রয়োজনীয় টাকা দাবী করা হয় যা যৌতুকেরই বিবর্তন।।

ছবি

 

সংযুক্তি

 
 

Share with :

facebook twitter